দোহাজারী–কক্সবাজার রেলপথ: আ.লীগ সরকার খরচ বাড়িয়েছে ৮৭৪%

কক্সবাজার রেল স্টেশনে পড়ে আছে ৩৯ কক্ষের হোটেল

ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ২৯/১২/২০২৪ ৩:৩৯ পিএম , আপডেট: ২৯/১২/২০২৪ ৩:৪০ পিএম

সম্প্রতি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন, পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে এমন চিত্রই তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনটিতে বলা হয়েছে, বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা না করেই প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। খরচ আর মেয়াদ নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, মূল প্রকল্পের মেয়াদ ছিল ৩ বছর; কিন্তু বাড়তি সময় লেগেছে ১২ বছর। সব মিলিয়ে ১৫ বছরে প্রকল্প শেষ করা হচ্ছে। চলতি ডিসেম্বর মাসে প্রকল্পটি আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার কথা।

চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ারিং করপোরেশন (সিআরইসি) ও বাংলাদেশের তমা কনস্ট্রাকশন কোম্পানি এবং চায়না সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন করপোরেশন (সিসিইসিসি) ও বাংলাদেশের ম্যাক্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড দুই ভাগে কাজ করেছে।

এদিকে প্রকল্পটির আওতায় কক্সবাজারের রামু থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম সীমান্ত পর্যন্ত প্রায় ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কথা ছিল; কিন্তু বাস্তবতা বিবেচনায় এ পথটির নির্মাণ আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। তাতে প্রকল্প খরচ কমছে। ইতিমধ্যে পরিকল্পনা কমিশনে এই প্রকল্প নিয়ে একটি সংশোধনী প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এতে খরচ কমিয়ে ১১ হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে। এর পরও ব্যয়ের পরিমাণ মূল প্রকল্প থেকে ৩৪৩ শতাংশ বেশি। এখনো এই সংশোধনী প্রস্তাব পাস হয়নি।

গত ১১ ও ১২ অক্টোবর আইএমইডির পরিচালক মুমিতুর রহমান চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করে সম্প্রতি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তাতে অস্বাভাবিক খরচ ও সময় বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামো অযত্ন–অবহেলায় পড়ে থাকার চিত্র উঠে এসেছে। এ ছাড়া প্রকল্পের খরচ নিয়ে ৪৪০ কোটি টাকার অডিট আপত্তির কথাও বলা হয়েছে।

আইএমইডি সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা সব বড় প্রকল্প সরেজমিনে পরিদর্শন শুরু করেছি। এর অংশ হিসেবে দোহাজারী-কক্সবাজার রেলপথ প্রকল্প পরিদর্শন করা হয়েছে। সার্বিকভাবে প্রকল্পের কিছু অনিয়ম-ব্যত্যয় উঠে এসেছে। আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে পরিদর্শন প্রতিবেদন ও সুপারিশ পাঠাব।’


কক্সবাজার স্টেশনে পড়ে আছে ৩৯ কক্ষের হোটেল

এই প্রকল্পের আওতায় ২৩৬ কোটি টাকা খরচ করে কক্সবাজার আইকনিক স্টেশন নির্মাণ করা হয়। পাঁচতলা স্টেশনের প্রতিটি ফ্লোরে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য হোটেল, রেস্তোরাঁ, রিটেইল শপ, মাল্টিপারপাস হলসহ বিভিন্ন অবকাঠামো তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে তৃতীয় তলায় ৩৯ কক্ষবিশিষ্ট হোটেলটি ফাঁকা পড়ে আছে।

কিন্তু এই পথে ট্রেন চলাচল এক বছর আগে চালু হলেও এসব বাণিজ্যিক অবকাঠামো ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি। আইএমইডির কর্মকর্তারা সরেজমিনে এসব চিত্র দেখতে পেয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নির্মিত অবকাঠামো বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহারে বিলম্বের কারণে সরকার আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পাশাপাশি পর্যাপ্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এসব অবকাঠামো নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা আছে।

৪৪০ কোটি টাকার অডিট আপত্তি
আইএমইডির পরিদর্শন প্রতিবেদন অনুসারে, প্রকল্পটি শুরু থেকে ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট খরচের ওপর ২৫টি আপত্তি দিয়েছে বৈদেশিক সহায়তাপুষ্ট প্রকল্পগুলোর অডিট অধিদপ্তর। এসব অডিট আপত্তিতে অর্থের পরিমাণ প্রায় ৪৪০ কোটি টাকা। বেশির ভাগ আপত্তি তোলা হয়েছে সরকারি কোষাগারে পাওনা জমা না পড়া কিংবা শুল্ক-কর না কাটা নিয়ে। এ ছাড়া অতিরিক্ত বিল পরিশোধের বিষয়েও অডিট আপত্তি রয়েছে।

রেলপথ নির্মাণে ১৩৫ বছর লাগল
প্রকল্পের কাগজপত্র ঘেঁটে দেখা গেছে, ১৩৫ বছর আগে এই অঞ্চলে রেল যোগাযোগের বিষয়ে প্রথম আগ্রহ প্রকাশ করেছিল তৎকালীন ব্রিটিশ কলোনি মিয়ানমার। সে অনুযায়ী ১৮৯০ সালে মিয়ানমার রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রাম থেকে রামু ও কক্সবাজার হয়ে রেলপথ নির্মাণের জন্য সমীক্ষা চালানোর উদ্যোগ নেয়। তবে মিয়ানমার রেলওয়ে সমীক্ষা চালায় ১৯০৮-০৯ সালে। ১৯১৭–১৯ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রাম-দোহাজারী-রামু হয়ে আকিয়াব পর্যন্ত আবারও সমীক্ষা করা হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রকল্পের কাজও শুরু হয়। তখন চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারী পর্যন্ত ৫০ কিলোমিটারের মতো রেলপথ নির্মাণ করা হয়; কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে বাকি রেলপথ আর নির্মিত হয়নি।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ভারত, পাকিস্তান ও মিয়ানমার তিনটি পৃথক রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীনতা লাভ করে। ফলে রেলপথটি আর পূর্ণতা পায়নি। ১৯৫৮ সালে আইয়ুব খানের সরকার একবার উদ্যোগ নিলেও তা সফল হয়নি।

জাপান রেলওয়ে টেকনিক্যাল সার্ভিস (জেআরটিএস) ১৯৭১ সালে এ পথে মালবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচলের সম্ভাবনা নিয়ে সমীক্ষা করার উদ্যোগ নেয়; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ায় তা আর হয়নি। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আবার পাদপ্রদীপের আলোয় আসে প্রকল্পটি। সরকারের অনুরোধে ১৯৭৬-৭৭ সালে আবার সমীক্ষা করে জেআরটিএস। পরে ১৯৯২ সালে এসকাপ কমিশন অধিবেশনে তিনটি ইউরো-এশিয়া রেল নেটওয়ার্ক স্থাপনের উদ্যোগ নেয়। এর একটি রুট বাংলাদেশ হয়ে মিয়ানমারে যাওয়ার কথা। তারপর অনেক দিন এ নিয়ে আর কথা হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর আঞ্চলিক সহযোগিতার অংশ হিসেবে আবারও এ রেলপথ নির্মাণের উদ্যোগ নেয়

পাঠকের মতামত

রামুতে দেশ বিরোধী চক্রান্ত প্রতিহত ও অশ্লীলতা নিষিদ্ধের দাবি

দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে আভ্যন্তরীণ ও ভিনদেশি ষড়যন্ত্রের প্রতিবাদ, বিজয় উৎসবের নামে অশ্লীলতা-বেহায়াপনা বন্ধ এবং সাদপন্থী ...

কক্সবাজারে থার্টি ফার্স্টে পানশালা বন্ধ, থাকছে না উন্মুক্ত আয়োজন

থার্টিফার্স্ট নাইট ও ইংরেজি নববর্ষের প্রথম প্রহরকে সামনে রেখে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়েছে কক্সবাজার জেলা পুলিশ। ...

সীমান্ত সম্পূর্ণভাবে আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে – টেকনাফে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

সীমান্তের যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় আমরা প্রস্তুত স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, সীমান্ত ও ...